গাজা যুদ্ধে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল (হিউম্যান শিল্ড) হিসেবে ব্যবহার করত ইসরাইলি সেনারা। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) নন-রিজার্ভিস্ট ব্রিগেডের এক সিনিয়র কর্মকর্তা। দিনে অন্তত ছয়বার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের এভাবে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হত বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সময় রোববার (৩০ মার্চ) ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নাম গোপন করে এসব জানান ওই সেনা কর্মকর্তা। তিনি নয় মাস ইসরাইলের সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি একজন নন-রিজার্ভিস্ট সেনা। সামরিক বাহিনীতে নন-রিজার্ভিস্ট ব্রিগেড হলেন তারা, যারা রিজার্ভ ফোর্স কিংবা সংগঠনের সদস্য না। অর্থাৎ তারা সামরিক বাহিনীর নিয়মিত, পূর্ণকালীন ব্রিগেড। রিজার্ভিস্টরা সামরিক বাহিনীতে খণ্ডকালীন সদস্য।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নিয়মিতই ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গেছে। এটিকে রণনীতি হিসেবে ব্যবহার করতেন তারা। যেকোনো সামরিক অভিযানের আগে গাজার বাড়িগুলোতে জোর করে ফিলিস্তিনি কোনো নাগরিককে প্রবেশ করিয়ে তারা নিশ্চিত হতেন সেখানে কোনো বিষ্ফোরক বা হামাস যোদ্ধা রয়েছেন কিনা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, ফিলিস্তিনিদের এভাবে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পদ্ধতিকে আইডিএফ সেনারা ‘মসকিউটো প্রোটোকল’ নামে অভিহিত করত।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার দু’মাস পরে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম এই অমানবিক রণনীতির মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাধারণত এই কাজে সেনারা কুকুর ব্যবহার করে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে সে সময় সেনাবাহিনীতে কুকুরের অভাব ছিল না। অথচ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের এ কাজে ব্যবহার করা হত। সেনারা এসব নাগরিকদের শাবিশ বলে অভিহিত করতেন।’
প্রতিটি প্লাটুনে একজন করে অর্থাৎ প্রতিটি ব্রিগেডে ৩৬ জন শাবিশ রাখা হয়। আন্তজার্তিক মানবাধিকার আইনে যেকোনো যুদ্ধে মানবঢাল ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া আন্তর্জাতিক আদালতের রোম সংবিধির অধীনে এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।
এ বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত মাসে ছয়টি তদন্ত শুরু করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তবে প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনী এই ব্যাপারে আন্তরিক হলে এক হাজার তদন্ত করা প্রয়োজন ছিল বলে অভিমত দেন ওই সেনা কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে এই পদ্ধতি এতটাই স্বাভাবিক যে, আমার মনে হয়েছে আমার বিভ্রম হচ্ছে। আমি জানিনা কোন পরিস্থিতি বেশি খারাপ- সেনাবাহিনী জানত না যে অভিযানে কি হচ্ছে নাকি তারা জেনেও কিছু করেনি।’
এ বিষয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও মানবঢাল ব্যবহার বেড়েছে। বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনে তা বন্ধ করার উদ্যোগ না নিয়ে বরং এটিকে অভিযানের সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, গাজার বিভিন্ন বাড়িতে অভিযানে মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করে রোবট কিংবা কুকুরও ব্যবহার করা যায়।
এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে অনুসন্ধান করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান তিনি। বিনা কারণে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলার পক্ষপাতি নন এই ইসরাইলি সেনা কর্মকর্তা।
সূত্র : ইউএনবি