আকাশচুম্বী ভবনের বিভিন্ন জানালা বা কাচের অংশকে সৌর প্যানেলে রূপান্তর করে সেগুলোকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেবে এটি।
স্বচ্ছ সৌর কোষ ব্যবহার করে সূর্যের আলোকে বিদ্যুতে রূপান্তর করতে পারে এমন এক সৌর প্যানেল তৈরি করেছেন গবেষকরা।
এ উদ্ভাবনটি করেছে ইউরোপের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে ‘সিটিসোলার’ প্রকল্পের আওতাধীন গবেষকদের একটি দল।
তাদের দাবি, নবায়নযোগ্য বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ক্ষেত্রে এক বিরাট অগ্রগতি দেবে এই সাফল্য। যার ফলে আকাশচুম্বী ভবনের বিভিন্ন জানালা বা কাচের অংশকে সৌর প্যানেলে রূপান্তর করে সেগুলোকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেবে এটি।
সৌর প্যানেলটি তৈরির জন্য প্রচলিত ‘অলৌকিক উপাদান’ পেরোভস্কাইটের সঙ্গে জৈব সৌর কোষের সংমিশ্রণ করে ১২.৩ শতাংশ সক্ষমতা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা প্রায় বাণিজ্যিক সৌর কোষের কাছাকাছি।
“সমন্বিত শক্তি সমাধান তৈরির ক্ষেত্রে পরবর্তী বড় পদক্ষেপ হতে পারে এই স্বচ্ছ সৌর কোষ,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ডেনমার্ক’-এর অধ্যাপক মর্টেন ম্যাডসেন।
“আধুনিক বিভিন্ন অফিস ভবনের সামনের বড় কাচের বিভিন্ন অংশকে অতিরিক্ত স্থান বা বিশেষ কাঠামোতে পরিবর্তন করা ছাড়াই এগুলোকে এখন বিদ্যৎ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে… আর এটি নতুন বাজার তৈরি বিশাল এক সুযোগ এনে দিতে পারে।”
সিটিসোলার প্রকল্পটির এই স্বচ্ছ সৌর কোষই প্রথমবারের মতো সৌর কোষের মূল চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। এ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কোষের সক্ষমতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।
গবেষকরা বলছেন, জৈব স্তরের সঙ্গে পেরোভস্কাইটের সংমিশ্রণটি সৌর কোষকে নিয়ার ইনফ্রারেড ও নিয়ার আল্ট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনী আলো থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে সাহায্য করে, যার ফলে দৃশ্যমান বর্ণালী থেকে আলো সহজেই এতে প্রবেশ করতে পারে।
অধ্যাপক ম্যাডসেন বলেছেন, এ দুটি উপাদানই সাশ্রয়ী মূল্যের, যা এটিকে বাণিজ্যিকভাবে ভবনে স্থাপনের জন্য উপযোগী প্রযুক্তি করে তুলেছে।
এ প্রযুক্তিটি বর্তমানে প্রোটোটাইপ পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি এরইমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ থেকে প্রায় ৩৩ লাখ পাউন্ড তহবিল পেয়েছে।
ইন্ডিপেনডেন্ট লিখেছে, এ অনুদান বিল্ডিং খাতে ইউরোপকে পুরোপুরি কার্বনমুক্ত করার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে, যা ইউরোপ মহাদেশের জ্বালানি খরচের প্রায় ৪০ শতাংশ।
“এ গবেষণার আরও উন্নতির প্রয়োজন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা জানি, এই সৌর প্যানেল তৈরিতে চ্যালেঞ্জ কোথায় ও সেগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের কাছে একটি স্পষ্ট কৌশল রয়েছে,” বলেছেন অধ্যাপক ম্যাডসেন।
“এ কাজের জন্য আমাদের যা আছে তা-ই আমরা বাড়াতে পারি। তবে আমাদের ব্যবসায়িক অংশীদার প্রয়োজন।”