বিএনপির বর্জনেও মাঠে থাকছে অনেক প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করল বিএনপি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না তারা। গত সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনকি নির্বাচনে দলের নেতাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়ারও কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে না দলটি। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এদিকে দলের এমন কঠোর অবস্থানের মধ্যেও দেশের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির পদধারী বেশ কিছু নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের কেউ দলের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বললেও অনেকে আবার রয়েছেন অনড় অবস্থানে। তারা বলছেন, স্থানীয় জনগণের চাপে তারা প্রার্থী হয়েছেন। সেখান থেকে তাদের সরে আসা সম্ভব নয়। আবার অনেক প্রার্থী আছেন দোদুল্যমান অবস্থায়। কী করবেন– তা নিয়ে রয়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। 

দলটির নেতাকর্মীরা জানান, ঈদের আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে বিএনপির দুটি বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। ফলে উপজেলা নিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি। সর্বশেষ গত সোমবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সরকারের অধীনে আসন্ন চার ধাপের উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। দলটি বলেছে, ক্ষমতাসীন সরকার ও তার সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য এর আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন তারা বর্জন করেছে। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এ জন্য আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সব ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানান, বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্র থেকে একেবারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের করুণ অবস্থা। বিগত আন্দোলনে মামলা-হামলায় প্রত্যেকে বিপর্যস্ত। অনেকে এখনও কারাগারে আছেন, অনেকে বাড়িঘরে যেতে পারছেন না। এমন অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো আগ্রহ নেই বলে দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছেন জেলা পর্যায়ের নেতারা। তারা বলেন, দলের অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থকষ্টে আছেন বেশির ভাগ নেতাকর্মী। এ অবস্থায় আরেকটি নির্বাচনী কর্মযজ্ঞে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তাদের নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূল নেতারা তাদের এ মতামত তুলে ধরেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। সেখানে যারা এই সিদ্ধান্ত অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন দলের শীর্ষ নেতা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের আগের সিদ্ধান্তই বহাল আছে। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবেন না। দলের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির কোনো নেতা প্রার্থী হলে আগের মতোই দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই গত সোমবার প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে সারাদেশে বিএনপির প্রায় চল্লিশজন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে আগে থেকেই বহিষ্কৃত, অনেকের দলে কোনো পদ নেই। আবার অনেকে স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন। 

অবশ্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতাদের মধ্যে নানা মত রয়েছে। কেউ স্থানীয় জনগণের চাপ আমলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয় অনড় রয়েছেন, কেউ দলের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলছেন, আবার কেউ আছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তবে নেতাকর্মীরা জানান, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা নেতাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি প্রত্যাহার করতে পারেন। 

যা বললেন প্রার্থীরা
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম বলেছেন, দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁর ওপর সব স্তরের মানুষের যে চাপ, সেখান থেকে আর সরে আসার সুযোগ নেই। পাকুন্দিয়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত দল যদি সম্মতি না দেয়, তাহলে তিনি তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন।

বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সমকালকে বলেন, নেতাকর্মীকে দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহারের সময় আছে। তারা যদি দলের সিদ্ধান্ত না মানেন, তাহলে স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পঞ্চগড় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু দাউদ প্রধান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ভোট নিরপেক্ষ হবে। এসব কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাসুদুল আলম দোহা জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে আমরা সব জায়গায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাচ্ছি। স্থানীয়ভাবে কিছু চেয়ারম্যান ও মেম্বর না থাকলে কর্মীদের যাওয়ার আর জায়গা থাকবে না। এখন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানান। মাসুদুল আলম দোহা শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর বাবা মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই দেশের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন– দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে অথবা নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় থাকবে। তবে শেষ পর্যন্ত দল তার আগের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে কঠোর অবস্থান প্রকাশ করে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন– যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের অনেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করবেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews