একটা অভিন্ন প্রশ্ন তিনি ড. ইউনূস এবং ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ দুজনকেই করেছিলেন—কেউ যদি ভিক্ষা চায় আপনি কী করেন? গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ইউনূস বললেন, ‘আমি খুব বিব্রত হই।’ অন্যদিকে আবেদ বললেন, ‘আমি তাকে সালাম জানিয়ে আমার না দেওয়ার ইচ্ছাটা প্রকাশ করি।’
কেন? ‘কারণ ভিক্ষা দেওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং তাদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। মনে পড়ে যায় ছোটবেলার এক গল্পে পড়েছিলাম এক কাঠুরেকে কুঠার দেওয়ার কথা। নবীজির কাছে এক ভিক্ষুক সাহায্য চাইলে তিনি তাকে এভাবে কাজ করে উপার্জনের পথ বাতলে দিয়েছিলেন।’
ক্ষুদ্রঋণের সুদ খুব বেশি, এ অভিযোগ সবার। ড. ইউনূস বললেন, ‘এই প্রশ্নটায় আমি কষ্ট পাই। আমি সমাজের সবচেয়ে বেশি অসহায় মানুষের দরজায় গিয়ে ঋণ পৌঁছে দিই। এই ঋণ তাদের স্বপ্ন দেখায়। আর সুদ বেশি যদি নিই, সেটা দিয়ে আমি কী করি? এই টাকা তো এই ব্যাংকেই থাকে। তারাই তো এই ব্যাংকের মালিক।’
প্রায় একই কথা বললেন ফজলে হাসান আবেদ। এক ঘণ্টার ওপর আমরা অধ্যাপক ইউনূসের সান্নিধ্যে কাটালাম। একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। ছবি তুললাম। তাঁর কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে এলান বললেন, ইতিহাসের পাতায় কমসংখ্যক মানুষ পদচিহ্ন আঁকতে পারেন। অধ্যাপক ইউনূস তাঁদেরই একজন। তিনি প্রকৃত অর্থেই বলতে পারেন যে তিনি লাখো মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছেন। এলান হুইটলির এই মন্তব্য আমাকে আন্দোলিত করে। আমি তাঁকে একা পেয়ে প্রশ্ন করি, আমাদের জীবন কি তাহলে নিরর্থক? তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করেন। বলেন, ‘অনেককে নিয়ে এই সমাজ। সমাজে যিনি যে পেশায় আছেন, সেই পেশায় থেকে অবদান রাখছেন। সেই অবদান অর্থময় করা দরকার। যেন তাতে মানুষের কল্যাণ হয়। এতে ব্যথিত হওয়ার কিছু নেই।’ বললেন, ‘আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। এর মধ্যেই এ জগতের সার্বিক কল্যাণের জন্য আমাদের অনেক কিছু করতে হবে।’