নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণীর বিতর্কিত শরীফার গল্প নিয়ে আবারো সমালোচনা শুরু হয়েছে। দুই মাস আগে এই গল্প পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়া হবে না মর্মে মন্ত্রণালয়ের সাফ জবাবের পর আবারো সব মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির পক্ষ থেকে যখন গল্পটি বাদ দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে, তখন আগের অবস্থান থেকে এখন কিছুটা সরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিতর্কিত শরীফার গল্পটি নিয়ে যেভাবে দেশজুড়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে তাতে বর্তমান শিক্ষাবর্ষ থেকে সম্ভব না হলেও আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত এই শরীফার গল্পটি বাদ দেয়া হতে পারে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিতর্কিত শরীফা গল্প নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এনসিটিবি একটি কমিটির মাধ্যমে এই গল্পে সত্যিকার অর্থেই কোনো অসঙ্গতি বা বিতর্কিত বিষয় সংযুক্ত আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই শুরু করে। পরবর্তীতে ওই কমিটি তাদের সুপারিশে উল্লেখ করে যে, এই গল্পে বিতর্কিত বা সমালোচনা করার মতো কোনো বিষয় নেই। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামও সেই সময়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, অনেকে না বুঝেই সমালোচনা করছে। শরীফার গল্পে বিতর্কিত কোনো বিষয় নেই। এনসিটিবির চেয়ারম্যান নয়া দিগন্তকে আরো জানিয়েছিলেন, সরকার ‘ট্রান্সজেন্ডারকে’ স্বীকৃতি (২০১৩ সালে) দিয়েছে, কারণ তারা সমাজেরই অংশ। শরীফার গল্প এই বইটি তিনবার ‘রিভিউ’ হয়েছে। এ বিষয়ে বই রিভিউয়ের সময় ‘ইনকুশন স্পেশালিস্ট, জেন্ডার স্পেশালিস্ট’ তারা সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা সব কিছু দেখে বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন। বইতে যা দেয়া হয়েছে, তা ‘সময়ের প্রয়োজন’।

এ দিকে চলতি বছরের পাঠ্যবইয়েও সপ্তম শ্রেণীতে সংযুক্ত হয়েছে শরীফ থেকে শরীফা গল্প। নানা আলোচনা সমালোচনার পর অবশেষে এবার সেই গল্পটি বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে এ-সংক্রান্ত গঠিত পর্যালোচনা কমিটি। গল্পটি চলতি বছর থেকে নাকি আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বাদ যাবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির আহ্বায়ক ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুর রশীদ জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে এ-সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। এখন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সুপারিশে শরীফার গল্পে কী কী বিষয়ে আপনারা পরিবর্তন করতে বলেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সুপারিশ যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিয়েছি তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

কমিটির অন্য একজন সদস্য জানান, সপ্তম শ্রেণীর ওই গল্পের বেশ কিছু শব্দ নিয়ে কমিটির কয়েকজন সদস্য আপত্তি করেছেন। পরে গল্পটি বাদ দেয়া সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি এই গল্পে ব্যবহৃত ১৯টি শব্দ ‘ইসলাম ধর্ম’ ও ‘বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার’ সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন এবং এতগুলো সন্দেহ বাদ দেয়ার পর গল্পের সারমর্ম আর কিছু বাকি থাকে না। তাই গল্পটি পাঠ্যবই থেকে পুরোপুরি বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছি।

এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে আলোচনায় আসেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস। এরপর বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। তার চাকরিচ্যুতি এবং এই গল্পের বিষয়টি নিয়ে তখন থেকেই দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বিতর্কিত শরীফার গল্প পাঠ্যবই থেকে পুরোপুরি বাদ যাচ্ছে কি না- এ বিষয়ে জানতে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি প্রতিবেদন সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ নিয়ে আমরা কোনো তথ্য জানি না। মন্ত্রণালয় যদি আমাদের কোনো সংশোধনী বা নির্দেশনা দেয়, তা হলে সেটি আমরা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করব।





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews