‘আমি ভেবেছিলাম এটা দুঃস্বপ্ন!’ কিন্তু আমি আমার আত্মীয়দের বাড়িতে আগুন দেখেছি।’

ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে কথাগুলো বলছিলেন ৩৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ জারঘউন। খান ইউনিসে তার ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির কাছেই একটি তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলেন তারা, এর মধ্যেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে জেগে ওঠেন।

সোমবার রাতের হামলায় তার আশপাশে ২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকেই। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

২৫ বছর বয়সী রমেজ আলামমারিন গাজা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে শিশুদের লাশ নিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

তিনি ইসরাইল সম্পর্কে বলেন, ‘তারা গাজায় আবার জাহান্নামের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। লাশ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মাটিতে পড়ে আছে। আহতরা তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো ডাক্তার খুঁজে পাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘তারা ওই এলাকার একটি ভবনে বোমা হামলা চালিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হতাহতরা রয়েছেন। চারদিকে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন জীবনের চেয়ে বোধহয় মৃত্যুই ভালো।’

যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়ে গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোর থেকে ব্যাপকভাবে হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪২ জন ফিলিস্তিনির নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় সবাই সে সময় সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই ইসরাইলি বাহিনী গাজায় বিমান হামলা চালায়। ২০টিরও বেশি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান গাজা সিটি, রাফাহ ও খান ইউনিসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে শুরু করে।

প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে নিহতদের মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি শিশু এবং ২৮ জন নারী রয়েছে বলে জানা গেছে। কর্মকর্তারা সব হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

গাজার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হামাসের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফাহ হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা ‘হামাসের সাথে জড়িত লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালাচ্ছে।

গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় এটিই সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ মঙ্গলবার সকালে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘আমাদের পণবন্দীদের মুক্তি দিতে হামাসের অস্বীকৃতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জবাবে এই হামলা করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘ইসরাইল এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করবে।’

গাজায় হামলার পরিকল্পনা আইডিএফ গত সপ্তাহের শেষে উপস্থাপন করেছিল এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা অনুমোদন করেছিল বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিলের জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে হামাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরাইল গাজায় অবশিষ্ট ইসরাইলি পণবন্দীদের একটি অজানা ভাগ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

তবে হামাস এখনো যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার ঘোষণা করেনি। এর পরিবর্তে তারা মধ্যস্থতাকারী ও জাতিসঙ্ঘকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র ফক্স নিউজকে বলেছেন, হামলা চালানোর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সাথে ইসরাইল পরামর্শ করেছিল।

গত পহেলা মার্চ গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হয়। এরপর আলোচনাকারীরা এই যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নেয়ার পথ খোঁজার চেষ্টা করেন। দুই দিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দোহায় আলোচনা শুরু হয় যা ৭২ ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। এতে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে বাড়ানোর আলোচনা শুরু করেন বা যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় পর্যায়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে তা কার্যত ব্যর্থ হয়।

যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পর্যায়টি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, যার মধ্যে হামাসের হাতে বন্দি পণবন্দীদের এবং ইসরাইলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে আলোচনায় যুক্ত একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, পরোক্ষ আলোচনায় উইটকফের ঠিক করে দেয়া চুক্তির মূল বিষয়গুলো নিয়ে ইসরাইল ও হামাস একমত নয়।

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। তখন হামাস ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালালে ১২০০ জনেরও বেশি ইসরাইলি নিহত হন। ওই সময় ২৫১ জন ইসরাইলিকে পণবন্দী করা হয়েছিল।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ৪৮ হাজার ৫২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বেশিভাগই বেসামরিক নাগরিক। গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আনুমানিক ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews