ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। একেক ঋতুতে একেক রূপে হাজির হয় প্রকৃতি। ঋতুরাজ বসন্তের প্রকৃতি সেজেছে নবরূপে। বাংলা পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টানোর প্রয়োজন নেই। প্রকৃতিই জানান দিচ্ছে, এখন বসন্ত। কোকিলের কুহু ডাক আর ভোরের দখিনা মৃদু হাওয়া কানে কানে ঋতুরাজের আগমনবার্তা দিয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংবাদদাতাদের পাঠানো বসন্তের ফুল ও পাখির ছবি ছাপা হচ্ছে পত্রিকার পাতায়। শীতের রুক্ষতা শেষে ন্যাড়া গাছগুলো ধীরে ধীরে ভরে উঠেছে সবুজ পাতায়। পথের দুপাশে, ঝোপঝাড়ে, নার্সারিতে, রিসোর্টে, বাড়ির প্রাঙ্গণে ও শখের ছাদবাগানে গাছে গাছে ফুটে আছে বসন্তের নানা জাতের ফুল। রাস্তার পাশে থাকা সজিনা গাছগুলোতে থোকায় থোকায় সাদা ফুল শোভা ছড়াচ্ছে। গ্রামের আঁকাবাঁকা পথের পাশে ও ঝোপঝাড়ে ফুটে আছে ভাঁট ফুল। সুগন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে। শখের ফুলবাগানে মাধবীলতায় ফুটেছে ফুল।

‘আজ ফাগুনে আগুন লাগে পলাশে-শিমুলে।’ পথে-প্রান্তরে গাছে গাছে ফুটে আছে পলাশ ফুল। টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো বাঁকানো রক্তিম পলাশের নান্দনিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে পথচারীদের। চোখ ফেরানো দায়। পলাশ ফুলের মধু পানে ব্যস্ত সবুজ টিয়া পাখি ও কাঠবিড়ালিরা। নিঃশব্দে মাটিতে ঝরে পড়ছে পলাশ। ঢাকা-কুমিল্লা হাইওয়ের দাউদকান্দি থেকে নিমসার অংশে রোড ডিভাইডারে লাগানো অসংখ্য গাছে ফুটে থাকা পলাশ নজর কাড়ছে সৌন্দর্যপিপাসুদের। মুগ্ধতার শেষ নেই। গাছে গাছে ফুটে আছে রক্তলাল শিমুল। খাবারের সন্ধানে শিমুল গাছে এসে বসেছে নানা জাতের পাখি। ঢাকা নগরীতে শিমুল গাছ তেমন একটা চোখে পড়ে না। হাতিরঝিল লেকের দক্ষিণে সারিবদ্ধ কয়েকটি গাছে শিমুল ফুটে থাকতে দেখা গেছে। আমবাগানের আমগাছে মুকুল এসেছে। আমের মুকুলে ভ্রমরদের ওড়াউড়ি। খরায় মুকুল ঝরে পড়ছে। এখনো আমের গুটি তেমন বড় হয়নি। বনেবাদাড়ে ফুটে আছে নাম না জানা নানা জাতের বুনো ফুল।  বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানী ঢাকার ফুসফুস হিসেবে খ্যাত রমনা পার্ক ছেয়ে গেছে ঝরা পাতায়। শুকনো পাতা নিয়ে খেলা করছে শিশুরা। শিশুদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠেছেন মায়েরা। দখিনা মৃদু হাওয়ায় খরখর শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে শুকনো পাতা। শীতের আমেজ কাটতে না কাটতেই ন্যাড়া গাছের ডালে ডালে নতুন পাতা আসতে শুরু করেছে। সবুজ কচি পাতা সূর্যের আলোয় চিকচিক করছে। পাশাপাশি কয়েকটি উঁচু গাছের ডালে গজিয়েছে লাল রঙের পাতা। নিচ থেকে দেখলে মনে হবে, গাছগুলো ছেয়ে আছে লাল ফুলে। জুড়িয়ে যায় চোখ। এ গাছের পাতা রং বদলায়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সবুজ পাতায় ভরে যাবে গাছগুলো। তখন চেনাই যাবে না। 

ফুলের নাম মণিমালা। বেগুনি রঙের ছোট ছোট অসংখ্য ফুল ঝরে পড়েছে মাটিতে। হাঁটাপথ থেকে শুরু করে আশপাশ ঢেকে গেছে ফুলে ফুলে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বেগুনি রঙের চাদর কেউ পথের ওপর বিছিয়ে রেখেছে। মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ান প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। পা দিয়ে মাড়াতে চান না ফুল। পাশ কাটিয়ে চলে যান অনেকে। রমনা পার্কের গোল চত্বরে হলুদ পাপড়ি মেলে সকালের সূর্যের দিকে মুখ তুলে চেয়ে আছে সূর্যমুখী ফুল। ফুল থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করছে। সূর্যমুখী ফুলের আয়ু কম। কদিন পরেই নেতিয়ে পড়বে। ফুটে আছে ডালিয়া। রঙিন রঙ্গন ফুলে বসেছে বাহারি প্রজাপতি। অশোক বনে সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে রঙিন অশোক ফুল। সৌন্দর্য যেন ঠিকরে পড়ছে। চারপাশ আলো করে ফুটে রয়েছে হলুদ টিকোমা। এ ফুলের ইংরেজি নাম- ইয়োলো বেল। চওড়া সবুজ পাতার ঘোমটার আড়ালে হাসছে বড় আকৃতির গোলাপি রঙের ফুল। দুষ্প্রাপ্য এ ফুলের নাম গ্যাস্টোভা। চারপাশে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে মন পবিত্র করা সাদা কাঠগোলাপ। অর্জুন গাছে ফুটে থাকা হালকা গোলাপি আর সাদা রঙের মিশেলের ছোট ফুল মনে আনে প্রশান্তি। পার্কে ঘুরতে গিয়ে কেউ ফুলের ছবি তুলছেন, কেউবা সেলফি। কাঠবিড়ালিরা খাবারের খোঁজে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। এদের দুরন্তপনার শেষ নেই। গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়াল দেওয়াই যেন এদের কাজ। শালিক পাখিরা মাটিতে নেমে এসেছে। নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে জোড়ায় জোড়ায়। ঘাসের মধ্যে খুঁটে খাচ্ছে পোকামাকড়। বাংলায় একটা প্রবচন আছে- ‘এক শালিকে রাগ; দুই শালিকে ভাব।’ পবিত্র রমজান মাসের সকালে অনেকটা নির্জন রমনা পার্ক। প্রাতর্ভ্রমণকারীর সংখ্যা হাতে গোনা। দুর্লভ প্রজাতির অনেক গাছগাছালির দেখা মেলে রমনায়। কিছু কিছু গাছের বাংলা নাম, ইংরেজি নাম, বৈজ্ঞানিক নাম ও গোত্র পরিচিতি গাছের পাশে শোভা পাচ্ছে।

একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে নীল আকাশের নিচে প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসতেই হবে আপনাকে। তাই তো কর্মক্লান্ত মানুষ অবকাশ যাপন করতে ছুটে যান নির্জন পাহাড়ে; সমুদ্রের কাছে। পাহাড়ের নির্জনতা আর সমুদ্রের বিশালতা স্বস্তি এনে দেয় মানুষের মনে। ‘আহা, আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতি পর্যায়ের অসংখ্য গান ও কবিতার মাধ্যমে ঋতুরাজ বসন্ত আরও তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে আমাদের জীবনে।

লেখক : সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, জনতা ব্যাংক পিএলসি



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews