কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রদের গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়ার পর তাদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া ও মায়াকান্না এবং সাহায্য করার কথা বলা জনগণকে প্রতারণা করার আরেকটি নজির। তাই এই সরকারকে বলব, সব হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশ এবং দেশের মানুষকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দিন।’

শনিবার (২৭ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। এতে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাংবাদিক নেতা সাঈদ খানসহ অন্যান্য সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও রিমান্ডের সমালোচনা করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, ‘নুরুল হক নুরুকে আদালতে রিমান্ড শেষে নিয়ে আসার সময় গণমাধ্যমে যে চিত্র এসেছে তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকে আলোড়িত করবে। রিমান্ডে এমনভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে যে তিনি দাঁড়াতেই পারছে না। মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে অবৈধ সরকার।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের তুলে নেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘এই ধরনের বর্বরোচিত অমানবিক কাজ পুরো সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।’

বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ জন জাতীয় নেতা ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করা হয়েছে। গতকাল যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসায় তল্লাশি করে তাকে না পেয়ে তার ভায়রা, শ্যালক ও শ্যালকের ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।

নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশির নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘অবৈধ পন্থায় সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা আগলে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদ ধরে রেখেছে। তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যার ঘটনা, সাজানো রায় দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান, ৫০ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে হয়রানি এবং খুন-গুম, রিমান্ডের নামে নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার সৃষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা-নির্যাতনের পর এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সাজানো মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধী মতের নেতাদেরকে হত্যা, গ্রেফতার, গুলি করে আদালতে উঠানোর আগেই নির্যাতন করে পঙ্গু করা হচ্ছে এবং বিচার বিভাগকে দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আবারও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেখানে রিমান্ডের ন্যূনতম আইন মানা হচ্ছে না।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন ফখরুল।

ফখরুল বলেন, ‘সরকার জনরোষে পড়ার ভয়ে জোর করে ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার লক্ষ্যে দেশে কারফিউ দিয়ে রেলসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে রেখেছে, জনগণকে কর্মহীন রেখে অনাহারে দিনাতিপাত করতে বাধ্য করছে, দ্রব্যমূল্য দিন দিন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে জাতি দ্রুত মুক্তি চায়, এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান।’

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি সাঈদ খানকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, সাঈদ খানকে গত ২৫ জুলাই গভীর রাতে তার মগবাজারের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে। পরে সাঈদ খানকে মেট্রোরেল পোড়ানোর বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তিনি ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিসেবে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকার পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে গভীর রাতে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং রাতভর তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

এক সপ্তাহে চার সাংবাদিক হত্যা ও দুই শতাধিক সাংবাদিক আহত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে সাংবাদিক সাঈদ খানসহ এ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও বিরোধী দলের সকল নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সকলের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews