ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে গোপন গ্রুপ চ্যাটিং ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি খবরের শিরোনামে এসেছে সিগন্যাল অ্যাপ। বিনামূল্যের এ অ্যাপটিতে মার্কিন কর্মকর্তাদের গোপন আলাপচারিতা ফাঁসের খবরটি স্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস।
গোপন এ গ্রুপ চ্যাটিংয়ে অসাবধানতাবশত যোগ হয়ে যান আমেরিকান ম্যাগাজিন ‘আটলান্টিক’-এর প্রধান সম্পাদক জেফ্রি গোল্ডবার্গ, যেখানে ইয়েমেনে হুথি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
জেফ্রি গোল্ডবার্গ বলেছেন, ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে তাকে এই গ্রুপ চ্যাটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছিল। সেখানে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সেসব হামলা নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
এ ঘটনা এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ঝড় তুলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এটিকে ইতিহাসের ‘অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ’ সামরিক গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেট নেতা চাক শুমার। একইসঙ্গে তদন্তের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু সিগন্যাল অ্যাপটি আসলে কী? এবং কতটা নিরাপদ?
নিরাপত্তা অ্যাপ
এটি এমন একটি অ্যাপ, যা সরাসরি বার্তা ও গ্রুপ চ্যাটের পাশাপাশি ফোন এবং ভিডিও কলের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সিগন্যাল অ্যাপের আনুমানিক মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা চার থেকে সাত কোটি, যা সবচেয়ে বড় মেসেজিং পরিষেবা হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের তুলনায় বেশ কম। কারণ ওই অ্যাপদুটোর গ্রাহক সংখ্যা হিসাব করা হয় শতকোটিতে।
তবে সিগন্যাল অ্যাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের চেয়ে উন্নত, যার মূলে রয়েছে এর এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন।
সহজ কথায় বলতে গেলে, কেবল প্রেরক ও প্রাপকই সিগন্যাল অ্যাপের এসব টেক্সট বার্তা পড়তে পারবেন। এমনকি এসব বার্তায় সিগন্যাল অ্যাপেরও প্রবেশ করার সুযোগ নেই।
হোয়াটসঅ্যাপ’সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্মেও এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এসবের বাইরেও সিগন্যালের রয়েছে বিভিন্ন নিরাপত্তা ফিচার।
যেমন– অ্যাপটি যে কোড ব্যবহার করে তা ওপেন সোর্স, অর্থাৎ, যে কেউ এটি পরীক্ষা করে দেখতে পারে যে হ্যাকাররা কোনও দুর্বলতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে কি না।
অ্যাপটির নির্মাতারা বলছেন, ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অনেক কম তথ্য সংগ্রহ করে তারা, বিশেষ করে ব্যবহারকারীর নাম, প্রোফাইল ছবি বা তারা কোন গোষ্ঠীর অংশ এমন কোনো তথ্যের রেকর্ড সংরক্ষণ করে না সিগন্যাল।
বিবিসি লিখেছে, অনেক অর্থ আয়ের জন্য এ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার কমিয়ে আনার কোনো প্রয়োজনে নেই সিগন্যালের। কারণ অ্যাপটি মার্কিনভিত্তিক এক অলাভজনক সংগঠন ‘সিগন্যাল ফাউন্ডেশন’-এর মালিকানাধীন। সংগঠনটি মূলত বিজ্ঞাপনের আয়ের বদলে অনুদানের উপর নির্ভর করে।
তথ্য এনক্রিপশন ও রেকর্ড
সিগন্যালের সমস্যা হচ্ছে অ্যাপটির মেসেজ নির্দিষ্ট সময়ের পর অদৃশ্য হয়ে যায়। অন্যান্য অনেক মেসেজিং অ্যাপের মতো নির্দিষ্ট সময়ের পর ব্যবহারকারীদের মেসেজ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার জন্য বার্তাগুলোকে সেভাবেই সেট করেছে সিগন্যাল।
আটলান্টিক-এর জেফরি গোল্ডবার্গ বলেছেন, ওই সিগন্যাল গ্রুপে যোগ করা কিছু বার্তা এক সপ্তাহ পরেই অদৃশ্য হয়ে গেছে।
বিবিসি লিখেছে, বিভিন্ন মেসেজিং পরিষেবাতেই নানা সময়ে ব্যাকডোর তৈরি করতে চেয়েছে বিভিন্ন প্রশাসন, যাতে এই ‘গোপন দরজা’ ব্যবহার করে জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি হতে পারে এমন বিভিন্ন বার্তা পড়তে পারে তারা।
সিগন্যাল ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিভিন্ন অ্যাপ এর আগে এ ধরনের ব্যাকডোর তৈরির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বলেছে, এমন ব্যাকডোর তৈরি হলে শেষ পর্যন্ত তা খারাপ ব্যক্তিরাই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবে।
এর আগে যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতারা যদি অ্যাপটিকে খাটো করে দেখেন তবে ২০২৩ সালে সেখান থেকে অ্যাপটি সরিয়ে নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছিল সিগন্যাল।